Posted by : Niamul Hasan বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৪

বিষয় টা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম না। যাই হোক আমার ছোট্ট মস্তিষ্কের অসুম্পুন্ন জ্ঞানে আলোচনা করতেই হলো, স্বঘোষিত একদল আহলে হাদিসের অনুসারীদের লাফালাফি করার কারনে এই লেখা টি লিখতে বসলাম।

প্রথমে সেই দলিল টি দেখে নিই যে টিকে তারা ৮ রাকাত তারাবি নামাজের দিলিল হিসেবে উত্থহাপন করেঃ

হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্নিত তিনি আয়েশা (রাঃ) কাছে জানতে চান, নবীজী (সাঃ) এর নামাজ কেমন হতো রমাজান মাসে? তিনি (আয়েশা রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) রমজান ও রমজান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি চার রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন চার রাকাত পড়তেন। তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন তিন রাকাত। তখন আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে (ঘুমিয়ে) যান? তিনি বললেন, (রাসূল সাঃ) “হে আয়েশা নিশ্চই আমার দুচোখ ঘুমাই, আমার কলব ঘুমায় না”। (সহহী বুখারীঃ বিতর অধ্যায়। হাদিস নং ১৩৫)

স্বঘোষিত আহলে হাদিস অনুসারী রা বলেন যে এই হাদিসের ভিতিতে তারাবি নামাজ ৮ রাকাত। বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে ২০ রাকাত তারাবির পক্ষে প্রচুর দলিল থকলেও তারা এ ব্যাপারে অন্ধ।
এবার আমরা বিচার করে দেখি যে আসল ঘটনা টা কিঃ

হাদিস টির বিশ্লেষনঃ
===============
====
১। হাদিস টা কি আসলে তারাবি নামাজ সম্পর্কে বলছে
----------------------------------
• এই হাদিস টা যদি তারাবি নামাজ সম্পর্কে হতো তবে এটিকে ইমাম বুখারী (রহঃ) বিতর অধ্যায়ের মধ্য সনযুক্ত করলেন কেনো? তারাবির অধ্যায়ে নয় কেনো? যারা এই হাদিস কে তারাবির দলিল বলে তারা ইমাম বুখারীর (রহঃ) এর চেয়েও বেশি বোঝে।

====================
২। তাহলে হাদিস টি কোন নামাজের কথা বলছে?
-----------------------------------
• কতিপয় আহলে হাদিসের আলেম ছাড়া সবাই একমত যে এই হাদিস টা তাহাজ্জুত নামাজ সম্পর্কে বলছে।

====================
৩। তাহলে হাদিটিতে “রমজান” শব্দ উল্লেখ করা হলো কেনো?
-----------------------------------
• রমজান শব্দ এই জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্ভবত আয়িশা (রাঃ) কে সম্ভবত জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে রাসূল (সাঃ) রমজানে তাহাজ্জুত নামাজ বাড়াতেন কি না। কারন অনেক হাদিস থেকে প্রমনিত যে রাসূল (সাঃ) রমজান মাসে সব এবাদতের পরিমানই বাড়িয়ে দিতেন। তাই আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, “রাসূল (সাঃ) রমজান ও রমজান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না।”
----------
• আমি যেহেতু “সম্ভবত” কথাটা বললাম যেহেতু অনেকে ধরে নেবেন যে এই ৩ নং পয়েন্ট টি ভুল। যদি আমার ৩ নং পয়েন্ট টি ভুল মানেন, তবে আপনাকে শুধু রমজান মাসে নয় সারা বছর তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। কারন, উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রাঃ) হাদিস টিতে বলেছেন, “রমজান ও রমজান ছাড়া”।

===================
৩। যদি এটা তারাবির নামাজ হয় তবে, “চার রাকাত, চার রাকাত” করে পড়ার কথা বলা হয়েছে কেনো?
------------------------------
• এই হাদিস কে যারা তারাবির দলিল হিসেবে মানেন, তাদের কে বলবো আপনারা যদি আহলে হাদিসই (হাদিস এর অনুসারী) হন তবে, ২ রাকাত ২ রাকাত করে তারাবি পড়েন কেনো? হাদিস অনুসারে চার রাকাত, চার রাকাত করে পরবেন। কারন হাদিস টিতে বলা হয়েছে, “তিনি চার রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন চার রাকাত পড়তেন। তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন তিন রাকাত।”
------------------------------

----------------------------------
এবার ২০ রাকাত তারাবির নামাজের পর্যালোচনাঃ
---------------------------------

২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করার নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন, হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)।

এই নিয়ম টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো “কিয়াস” এর ভিত্তিতে। কিয়াস হলো “একমত বা সহ মত পোষন করা”

কিয়াসের বিভিন্ন স্তর আছে, এই স্তর গুলোর ওপর ভিত্তিকরে কিয়াস এর গ্রহন যোগ্যতা নিধাররন করা হয়, এর আলোচনা ব্যাপক। আমি সংক্ষেপে বলছি,
1. প্রথমত কিয়াস নিধারন করা হয় জামানার ভিত্তিতে, সবচেয়ে শক্তিশালী কিয়াস সাহাবা-কিরামের কিয়াস, তারপর তাবেঈ দের, তারপর তাবে-তাবেঈন দের। এভাবে সময়ের ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে চলতে থাকবে।

2. দ্বিতীয়ত কিয়াস নির্ধারিত হয় সহমতের সংখ্যার ভিত্তিতে। এই হিসাব টি করা হয় সহমতের শতকরা সংখ্যার ভিত্তিতে। শতকরা যতবেশি লোক সহমত হবে, সেই কিয়াস তত বেশি শক্তিশালী হবে।
তাহলে ২০ রাকাত তারাবির কিয়াস টি সবচেয়ে শক্তিশালী কিয়াস। কারণ তা সাহাবী (রাঃ) রা করেছেন। এবং সকল সাহাবী (রাঃ) এই বিষয়ে একমত ছিলেন। এই কিয়াস যারা মানবে না, তারা কিয়াস ই অস্বীকার করে। কারন এর চেয়ে শক্তিশালী কোনো কিয়াস থাকতে পারে না।


৪। স্বঘোষিত আহলে হাদিসের কিছু লোক কিয়াস মানেনা। তাহলে?

• কিয়াস না মানা স্পষ্ট গোমরাহী। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মত কখনো কোনো ভ্রান্ত বিষয়ে একমত হবে না।”

• তারপরও যারা কিয়াস মানে না তারাও ২০ রাকাত তারাবি অস্বীকার করতে পারবে না কারন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা আমার ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত কে আকরে ধরো” (আবু দাউদ, তিরমিজি)। আর ২০ রাকাত তারাবি হলো আমির ঊল মু’মিনিন হযরত ওমর (রাঃ) সহ সকাল সাহাবী দের সুন্নত।

এতো কিছুর পরও যারা বলবে তারাবি, নামাজ ২০ রাকাত পড়া যাবে না। তারা হযরত ওমর (রাঃ) সহ সকল সাহবীদের চেয়েও বেশি হেদায়েত প্রাপ্ত।

বিঃদ্রঃ এই তথাকথিত আহলে হাদিস দের সৃষ্টি করেছে বৃটিষ শাসক রা। তারা ভারত উপমহাদেশ ছেড়েছে। কিন্তু স্বঘোষিত আহলে হাদিস নামাক এক ভাইরাস ইসলামের মধ্য রেখে গেছে, যাদের মুল কাজ হলো ইসলামের ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে ফেতনা সৃষ্টি করা। এদের বংশধর রা নিজেদের অজান্তেই এই কাজ করে যাচ্ছে। এদের আকিদায় এতো বেশি সমস্যা নাই, তাই এদের এদের এখনো খারেজি বলে ঘোষনা করা যায় না। তাই এরা ইসলামের মধ্য বিষ কাটার মতো বিধে থেকে ফেতনা সৃষ্টি করে যাচ্ছে।

আমি আলোচনার কোনো ফাক রাখতে চাই না। তাই ২০ রাকাত তারাবির বিষয় টা আরো ক্লিয়ার করিঃ
ইমাম বুখারীর (রহঃ) হাদিস টা দ্বারা তারাবি নির্দেশ করেন নাই। এতো কিছুর পরও যারা বলবে যে উক্ত হাদিস টি তারাবির। তারা ইমাম বুখারী (রহঃ) কে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর ওপরে স্থান দিয়েছেন। এদের কাছে ইমাম বুখারীর (রহঃ) ওমর ফারুক (রাঃ) এর চেয়ে বড়। অথচ ইমাম বুখারীর (রহঃ) এর মর্যাদা হযরত ওমরের পায়ের ধুলোর সমান ও নয়।

এদের কাছে প্রশ্নঃ হযরত ওমরের (রাঃ) কি হাদিস কম পড়েছিলো যে তিনি খাম খেয়ালের বসে ২০ রাকাত তারাবি নির্ধারন করলেন?

====================

কথা একটাই যারা ২০ রাকাত তারাবির বিরোধীতা করে তারা, “”তারা হযরত ওমর (রাঃ) এর চেয়েও বেশি হেদায়েত প্রাপ্ত।

-অপঠিত দৈনিকী

{ 5 মন্তব্য(গুলি)... read them below or Comment }

  1. তারাবীহ স্বলাতের বিষয়ে বিখ্যাত হানাফি আলেম আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী দেওবন্দী (মৃঃ ১৩৫২ হিঃ) বলেছেন,
    ولا مناص من تسليم أن تراويحه كانت ثمانية ركعات ولم يثبت في رواية من الروايات أنه صلى التراويح والتهجد على حدة في رمضان “
    আর এই বিষয়টি গ্রহণে কোন বাঁধা নেই যে, নবীর তারাবীহ ছিল আট রাকআত। আর কোন একটি বর্ণনাতেও এটি প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি রমযানে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা পড়েছেন।”
    এবং বলেছেন,
    وأما النبي – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فصح عنه ثمان ركعات، وأما عشرون
    ركعة فهو عنه بسند ضعيف وعلى ضعفه اتفاق “
    আর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হ’তে আট রাকআত তারাবীহ প্রমাণিত আছে। আর বিশ রাকআত- সেটি তার থেকে যঈফ সনদে বর্ণিত আছে। আর এর দুর্বলতার উপর ঐক্যমত আছে (আল-আরফুশ শাযী ১/১৬৬)।”

    উত্তরমুছুন
  2. তারাবীহ স্বলাতের বিষয়ে বিখ্যাত হানাফি আলেম আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী দেওবন্দী (মৃঃ ১৩৫২ হিঃ) বলেছেন,
    ولا مناص من تسليم أن تراويحه كانت ثمانية ركعات ولم يثبت في رواية من الروايات أنه صلى التراويح والتهجد على حدة في رمضان “
    আর এই বিষয়টি গ্রহণে কোন বাঁধা নেই যে, নবীর তারাবীহ ছিল আট রাকআত। আর কোন একটি বর্ণনাতেও এটি প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি রমযানে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ আলাদা আলাদা পড়েছেন।”
    এবং বলেছেন,
    وأما النبي – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فصح عنه ثمان ركعات، وأما عشرون
    ركعة فهو عنه بسند ضعيف وعلى ضعفه اتفاق “
    আর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হ’তে আট রাকআত তারাবীহ প্রমাণিত আছে। আর বিশ রাকআত- সেটি তার থেকে যঈফ সনদে বর্ণিত আছে। আর এর দুর্বলতার উপর ঐক্যমত আছে (আল-আরফুশ শাযী ১/১৬৬)।”

    উত্তরমুছুন
  3. হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারাবীহ এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮০৫, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}

    হযরত আলী রাঃ নিজেই রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি বিদআতের উৎপত্তি করবে তার ফরজ, নফল কিছুই কবুল হয় না। {বুখারী-২/১০৮৪, মুসলিম-১/১৪৪}


    বিশ রাকাতের পক্ষে এরকম অনেক হাদিস থাকলেও বুখারী, মুসলীমে আট রাকাতের কোন হাদিস নেই।

    ইমাম বুখারী নিজে রমজানে তাহাজ্জুদ ও তারাবী উভই পড়তেন।

    উত্তরমুছুন
  4. হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারাবীহ এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮০৫, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}

    হযরত আলী রাঃ নিজেই রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি বিদআতের উৎপত্তি করবে তার ফরজ, নফল কিছুই কবুল হয় না। {বুখারী-২/১০৮৪, মুসলিম-১/১৪৪}


    বিশ রাকাতের পক্ষে এরকম অনেক হাদিস থাকলেও বুখারী, মুসলীমে আট রাকাতের কোন হাদিস নেই।

    ইমাম বুখারী নিজে রমজানে তাহাজ্জুদ ও তারাবী উভই পড়তেন।

    উত্তরমুছুন
  5. রাসূল (সাঃ) বিশ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন এমন একটি শহীহ হাদিসের উল্লেখ চাই।

    উত্তরমুছুন

আল-কুরআনের আলো



কুরআন আয়াতের এই প্লাগইন টি আমরা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বিস্তারিত জানতে অথবা আপনার ওয়েব সাইটে এই প্লাগইন টি যুক্ত করতে এখানে ক্লিক করুন

Popular Post

- Copyright © অপঠিত দৈনিকী-র বাংলা ব্লগ